লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকাগুলোতে জমির আইলে অহরহ গাছ কালাইয়ে চাষ করছে কৃষক। সময়ের আবর্তনে এই গাছ কালাইয়ের চাষ কমে গেলেও আবারও জমির আইল, গ্রামীণ মেঠো পথের ধারে ও সাথী ফসল হিসেবে কচু ও হলুদ এবং আদার জমির মাঝে চাষ করছেন।
ফুলগাছ গ্রামের কৃষক মোঃ হযরত আলী বলেন, অহরহ বীজ থেকে গাছ কালাইয়ে চাষ হয়। জাত ভেদে গাছ কালাইয়ে গাছ ১০থেকে ১২হাত লম্বা ও ৫০ থেকে ৬০টি শাখা প্রশাখা যুক্ত হয়ে থাকে। ডালপালা জ্বালানী, পাতা ও ডগা পচিয়ে জৈব সার তৈরি করা যায়। ঘন করে লাগানোর ফলে বাড়ির বেড়া, মাটির ক্ষয় রোধ হয় বলে পুকুর এবং জমির আইলে লাগানো হয়। গাছ কালাই পতিত জমি, জমির আইলে, বাড়ির আশেপাশে, ধান বা সবজি ক্ষেতে পাশে, গ্রামীণ রাস্তার দু’পাশে খুব সহজে চাষ করা যায়। অহরহ গাছ শুকানোর পর উৎকৃষ্ট মানের খড়ি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অন্যান্য কৃষকরা বলেন, লাঙ্গল টেনে বা ২ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করে বীজ বোপণ করলেই চারা গাছ হয়ে যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে ফুল এবং তার কিছুদিন পর থেকেই ফল আসে। দু’একবার কীটনাশক স্প্রে করলেই চলে। এর জন্য আলাদা কোন খরচ করতে হয় না।
সরেজমিনে লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতিবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও ২টি (লালমনিরহাট, পাটগ্রাম) পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমিগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, হলুদ, কচু, এবং কপির জমির আইল ও রাস্তার ধারে অহরহ গাছ কালাইয়ের গাছ শোভা পাচ্ছে।
এলাকার কৃষকরা বলেন, গ্রামাঞ্চলে আঞ্চলিক ভাষায় এটি গাছ কালাই বলে পরিচিত। এটি কাচা অবস্থায় খিচুড়ি, সবজি এবং শুকনো হলে ডাল হিসেবে খাওয়া হয় বলে একটি গরীবের ডালও বলা হয়ে থাকে।
চিকিৎসকরা বলেন, প্রোটিন সমৃদ্ধ শরীর গঠনের জন্য অহরহ গাছ কালাই খুবই উপকারী। এর পাতার রস জন্ডিস রোগ নিরাময়েও কার্যকর। এছাড়া এর পাতা ও ডগা পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল ইসলাম খন্দকার বলেন, এই এলাকার কৃষকরা আগে থেকেই জমির আইলে অহরহ গাছ কালাই চাষ করে। এতে একদিকে যেন ক্ষেতের বেড়া হিসেবে কাজ করে অন্যদিকে এই গাছে পাতা জমিতে সবুজ সার তৈরী করে। অহরহ ডাল খেতেও যেমন পুষ্টিগুন, তেমনি কৃষকের ফসল ও জ্বালানী হিসেবেও গাছটি উপকারী।